মাঠের মধ্যে হই হুল্লোড়, চিৎকার,হাসি-কান্নার আওয়াজ কিংবা শোরগোল এখন অতীত।একটা সময় ছিল শিশুদের স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে, ঘুম ফাঁকি দিয়ে কিংবা মায়ের চোখের আড়ালে দাপিয়ে বেড়ানো পড়ন্ত বিকেল। রুপকথার গল্পের মত নতুন প্রজন্মের কাছে এটাও একটা গল্প কিন্তু শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা কিংবা ছোটাছুটি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম মোবাইল ফোন। যার বদৌলতে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়।এর হাজার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অসুবিধার পাল্লাও নেহাত কম নয়।যার ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশুরাও।
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুর স্নায়ু, চোখ ও কানের সমস্যা দেখা দিতে পারে এছাড়াও ফোনের রেডিয়েশন শিশুর মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।ডিভাইস আসক্ত শিশুকে চাইলেই ডিভাইস থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন কিছুটা কৌশল অবলম্বন। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মোবাইল থেকে শিশুকে দূরে রাখবেন।
বাবা-মায়ের আচরণের পরিবর্তন করুন:
ঘুম থেকে উঠে ,ঘুমতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত উঠতে-বসতে, চলতে- ফিরতে মোবাইল ছাড়া একটা মূহুর্ত ও আমরা ভাবতে পারি না।যার প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপরে।শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।বড়রা যা করে শিশুরা তাই অনুসরণ করে। তাই শিশুদের আচরণ পরিবর্তনের আগে বাবা- মার আচরণ কে পরিবর্তন করতে হবে।
শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিন:
২৪ ঘন্টা শিশুর পেছনে সময় দিতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই তবে যেটুকু সময় দিবেন তাকে কোয়ালিটি টাইম দিন। রান্না করার সময়, কাজের ফাঁকে কিংবা সময়ে – অসময়ে তার সাথে কথা বলছি, তার ভালো – মন্দ খবর নিচ্ছি এটা যতটা না কাজে দিবে তার থেকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তাকে কোয়ালিটি টাইম দিন যাতে পুরো মনোযোগ টা তার প্রতিই থাকে এবং সে তার ইমোশন গুলো আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে।
শখের কাজে উৎসাহিত করুণ:
শিশুর ভালোলাগা মন্দ লাগার উপর ভিত্তি করে তাকে তার শখের কাজ গুলোর দিকে উৎসাহিত করতে হবে।নাচ,গান, আবৃত্তি, উপস্থাপনা কিংবা সৃজনশীল যে কাজে তার আগ্রহ আছে সেই দিকে তাকে উৎসাহিত করুন যেটা তাকে সৃজনশীল মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে।
ডিভাইস ইউজ সময়সীমা:
শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ডিভাইসের ব্যবহার, ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে ডিভাইসের ব্যবহার শিশুর ডিভাইস আসক্তির অন্যতম কারণ। শিশুকে এটা বুঝান এটা প্রয়োজনীয় কাজের জিনিস, বিনোদনের মাধ্যম নয়। তাদেরকে তাদের পড়াশোনা কিংবা নতুন কিছু শেখার জন্য এটা ব্যবহার করতে দিন।যখন-তখন,সময়ে – অসময়ে শিশুর বায়না মিটাতে এর থেকে দূরে রাখুন।
পারিবারিক আড্ডা:
একটা সময় ছিল যখন পরিবারের সবাই, কিংবা কাজিনরা একত্রিত হয়ে গল্প গুজবে মেতে উঠত।আর এখন সময় পেলেই পাশাপাশি থেকেও সবাই হাতে একটা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।একটা সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসুন তাদের সাথে গল্প গুজবে মেতে উঠুন যা বাচ্চাদের সাথে সাথে বড়দের ও মেন্টাল রিফ্রেশমেন্ট এনে দিবে।
মাঠে খেলতে দিন:
শহুরে জীবনে তো নয়ই এমনকি গ্রামের বাচ্চারাও মাঠে খেলতে ভুলে গেছে।বাবা – মাও মনে করে এইতো ভালো, ঝগড়া – বিবাদ কিংবা ব্যাথা পাওয়ার ভয় নেই।তাই তারাও বাচ্চাদের শান্ত রাখতে হাতে ডিভাইস ধরিয়ে দেয়। কিন্তু এর সুবিধা খেয়াল করলেও এর অসুবিধার কথাটা আদৌ তারা বুঝতে পারে না।এটা যে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কতটা প্রভাব ফেলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বই পড়ার অভ্যাস :
ভার্চুয়াল জগতে শিশুর অবাধ বিচরণের সময়ে নজরদারিরন কোন সুযোগ নেই।তাই তারা ভালোর থেকে খারাপ জিনিসের প্রতি বেশি আসক্ত হচ্ছে। কাজের ব্যাপারে তাদের স্থিতিশীলতা হারাচ্ছে। এছাড়াও ধৈর্য্য ধরে বই পড়া, গুছিয়ে কথা বলা কিংবা সবার সাথে মিশার ক্ষমতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কোন কাজেই তাদের স্থিতিশীলতা নেই এখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলতে বাবা- মাকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
শিশুদের নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, তাদের তার ব্যবহার শিখাতে কিন্তু এতে যেন শিশুর স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে না পরে সেদিকে অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে।